শনিবার ২৪ মে ২০২৫ - ০৮:০৬
অগ্রসর ও আদর্শ হাওযায় আত্মশুদ্ধি ও নৈতিকতার গুরুত্বের প্রতি এক দৃষ্টি

আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক শিক্ষাই হাওযায় জ্ঞান ও আত্মিক উৎকর্ষের মৌলিক ভিত্তি। সর্বদা, ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা এ বিষয়ে জোর দিয়ে বলে আসছেন যে, তালিবে ইলম ও আলেমদের আত্মশুদ্ধি ও চারিত্রিক গুণাবলিতে সুসজ্জিত হওয়া উচিত।

হাওযা নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট অনুসারে ও KHAMENEI.IR মিডিয়ার তথ্যভিত্তিক সিরিজ "অগ্রসর ও আদর্শ হাওযা" অনুযায়ী, ক্বোম হাওযার নৈতিক শিক্ষার শিক্ষক হুজ্জতুল ইসলাম ও মুসলিমিন সাইয়্যেদ আহমাদ ফাকিহির সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে হাওযায় আত্মশুদ্ধি ও নৈতিকতার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রশ্ন: ইসলামী বিপ্লবের নেতার বার্তায়, হাওযার শতবর্ষ পুনঃপ্রতিষ্ঠার উপলক্ষে বলা হয়েছে যে হাওযা হলো ‘নৈতিক ও দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের কেন্দ্র’। আপনি কীভাবে এই আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্বকে ব্যাখ্যা করবেন?

উত্তর: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের মূল লক্ষ্যই ছিল আত্মশুদ্ধি। একটি সাধারণ ভুল হচ্ছে—“তাযকিয়াহ” শব্দের পরিবর্তে “আখলাক” শব্দ ব্যবহৃত হয়, আরেকটি ভুল হচ্ছে—গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের নৈতিকতা মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা। যদিও এগুলো ভালো, কিন্তু মরহুম আয়াতুল্লাহ মিসবাহ এবং আল্লামা তাবাতাবাই মনে করেন, কুরআনের নৈতিকতা তত্ত্ব এ ধরনের দর্শনের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

আল্লামা তাবাতাবাই কুরআনের একটি নতুন তত্ত্বকে তুলে ধরেন—“তাওহিদী আখলাক”। যার অর্থ এমন নৈতিকতা, যার সূচনা, অন্ত এবং কার্যপ্রণালী সবই আল্লাহর উপর ভিত্তিশীল। যেমন, রিয়া (প্রদর্শনবাদিতা)-এর মূল কারণ মানুষ সম্মান চায়, কিন্তু ভুলভাবে ভাবে এটি মানুষের হাতে। কিন্তু কুরআন বলে, সম্মান তো আল্লাহরই। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই সমস্ত সম্মান আল্লাহর জন্য” (আল-কুরআন)। যিনি এটি বিশ্বাস করেন, তার নৈতিক সমস্যা দূর হয়।

তেমনি, প্রকৃত ভয় দূর করতে হলে চাই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস। আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই সমস্ত শক্তি আল্লাহর জন্য।” যার অন্তরে এই বিশ্বাস থাকে, সে কারো কাছেই ভয় পায় না। এমনকি ইমাম খোমেইনিও বলেছিলেন, “আল্লাহর কসম করে বলছি, খোমেইনি আজ পর্যন্ত কাউকে ভয় পায়নি।” এটা কোনো সাহসিকতা নয়, এটা আল্লাহর মারেফাত।

প্রশ্ন: আপনি যে তাওহিদী আখলাক ও আত্মশুদ্ধির সংজ্ঞা দিলেন, তা তালিবে ইলমদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা কীভাবে নৈতিকতা ও মারেফাতের বুযুর্গদের কাছ থেকে পূর্ণতার শিক্ষা নিতে পারে?

উত্তর: হাওযায় আত্মশুদ্ধি ও তাওহিদী আখলাক অত্যন্ত মৌলিক ও কেন্দ্রীয় গুরুত্বের। কারণ হাওযা নিজেকে নবী ও কুরআনের নৈতিকতার প্রচারক হিসেবে দেখে। যদি শুধু কিছু আখলাকি গুণ ও দোষের পাঠই হাওযায় পড়ানো হয়, তবে তা যথেষ্ট নয়।

আসল নৈতিকতা হলো: পড়া, লেখালেখি, বিতর্ক—সবকিছু যেন আল্লাহর জন্য হয়। আল্লাহর জন্য পড়া, আল্লাহর ধর্ম প্রচার এবং মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করাই হলো আত্মশুদ্ধি। কোনো আলেম যদি বই লেখে, তা যেন নিজের নাম প্রচারের জন্য না হয়, বরং আল্লাহর জন্য।

তালিবে ইলমের প্রতিটি কর্মই যেন আল্লাহকেন্দ্রিক হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজকাল সংখ্যার ভিত্তিতে মূল্যায়ন বেশি, যেমন: কতটি প্রবন্ধ লিখেছে। অথচ, পূর্বসূরীরা আন্তরিকতার ভিত্তিতে পদ ত্যাগ করতেন।

উদাহরণস্বরূপ, যখন শায়খ আনসারিকে মারজিয়াত (ধর্মীয় নেতৃত্ব) দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়, তিনি বলেন তার এক সাথি ছিল যে আরও ভালোভাবে বুঝত—তাকে দিন। সেই ব্যক্তি দীর্ঘদিন পড়াশোনা থেকে দূরে থাকায়, আবার শায়খ আনসারিকে প্রাধান্য দেন। এটাই হলো নৈতিকতা।

শেষ কথা: যদি হাওযা পরিবর্তন ও সফলতা চায়, তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুতেই আল্লাহকেন্দ্রিক নৈতিকতা রাখতে হবে। প্রথম পাঠ হওয়া উচিত: “الدين معرفة الجبار” — “ধর্ম মানে হলো, মহান আল্লাহকে জানা”।

রাহবারে মুআজ্জামের (আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ি) জীবন, বক্তৃতা ও নির্দেশাবলির এক কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য হলো—সবকিছু আল্লাহর জন্য। যখন তিনি বলেন “আমরা পারি”, সঙ্গে সঙ্গে বলেন “আল্লাহর ফজলে, তাওফিকে, করুণায়”।

এই আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। নৈতিকতা ও আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ ছাড়া এই ধরনের স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha